খালেদা জিয়া সোমবার ফিরছেন সঙ্গে পুত্রবধূ জুবাইদাও

 

প্রায় চার মাস পর আগামী সোমবার লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর সঙ্গে ১৭ বছর পর দেশে আসছেন বড় ছেলে তারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানও। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়ার দেশে ফেরা নিয়ে মানুষের যেমন কৌতূহল আছে, তেমনি জুবাইদা রহমানের বিষয়েও আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

বিএনপি নেতাকর্মীদের অনেকের আত্মজিজ্ঞাসা, দেশে ফেরার পর খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হতে শুরু করবেন কি না? জুবাইদা রহমানের দেশে ফেরা কি কোনো ইতিবাচক বার্তা?

রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে এমন প্রশ্নের উদ্রেক হলেও দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়ার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত দেখা যাচ্ছে না।

তবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বাড়তে পারে। আর জুবাইদা রহমান দুই সপ্তাহ পর লন্ডন ফিরে যেতে পারেন। তাঁর এবারের সফরের সঙ্গে রাজনীতির কোনো যোগসূত্র নেই।

তবে তারেক রহমান ও তাঁর একমাত্র কন্যা ব্যারিস্টার জায়মা রহমান কবে দেশে ফিরছেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তাঁদের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আরো অপেক্ষায় থাকতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়া আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ হলেও সক্রিয় রাজনীতি করার মতো শারীরিকভাবে কতটা সক্ষম, সেই প্রশ্ন রয়ে গেছে। তবে আওয়ামী লীগ আমলে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে গুলশানের বাসায় যেভাবে জীবন কাটিয়েছেন, এখন আর সেই চিত্র দেখা যাবে না। সক্রিয় না হলেও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এবং দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর ভূমিকা থাকতে পারে।

ওয়ান-ইলেভেনের পর থেকে বিভিন্ন সময় ডা. জুবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসছেন বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। তবে পারিবারিক কিংবা দলীয় কোনো সূত্রই জুবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার কোনো সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি। তাঁর ঘনিষ্ঠজনরা বরং বলছেন, আপাতত জুবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। তারেক রহমান দেশে ফিরলে রাজনৈতিক চিত্র কী দাঁড়ায়, তার ওপর নির্ভর করবে সব কিছু।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কালের কণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা পর্বতসম।

তিনি লন্ডন যাওয়ার সময় যে জনসমাগম হয়েছে তাঁর দেশে ফেরায় মানুষের মধ্যে কী অভূতপূর্ব সাড়া পড়বে তা শুধু দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে।

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরিবারের অন্যরাও আসবেন। বাংলাদেশ শুধু ডা. জুবাইদা রহমানের শ্বশুরবাড়ি তা নয়, তাঁর নিজের জন্মস্থানও। তিনি বনেদি শিক্ষিত পরিবারের সন্তান। তিনি নিজেও শিক্ষাদীক্ষায় অদ্বিতীয়। তাঁর দেশে ফেরা মানুষের মাঝে কী দাগ কাটবে তা সামনে বলা যাবে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, এটা ইতিবাচক এবং তাঁকে ঘিরে মানুষের আকাঙ্ক্ষা বাড়বে।

গতকাল শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে আসছেন তাঁর দুই পুত্রবধূতারেক রহমানের স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান।

গুরুতর আহত অবস্থায় তারেক রহমানকে চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য নেওয়া হয়। সঙ্গে যান স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমান ও কন্যা জায়মা রহমান।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের আরো বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন আগামী ৫ মে সোমবার সকালে দেশে ফিরছেন। তাঁর সঙ্গে দুই পুত্রবধূরও আসার কথা রয়েছে।

কেমন আছেন খালেদা জিয়াজানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, মোটামুটি আলহামদুলিল্লাহ, আগের চেয়ে  অবশ্যই ভালো। কিভাবে দেশে ফিরছেন সে বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডামের দেশে ফেরার ব্যাপারে কাতারের আমিরের কাছ থেকে যে অ্যাম্বুল্যান্স লন্ডনে নেওয়ার জন্য পেয়েছিলাম, সেটা পেতে এখন একটু বিলম্ব হচ্ছে। সে জন্য ম্যাডাম ঠিক করেছেন, এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া না গেলে তিনি বাংলাদেশ বিমানেই আসবেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ বিমানে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। ৪ মে উনি রওনা হলে ৫ মে সকাল ১১টার দিকে দেশে এসে পৌঁছাবেন।

গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে লন্ডন পৌঁছান খালেদা জিয়া। লন্ডনে পৌঁছেই লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। টানা ১৭ দিন লন্ডন ক্লিনিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক প্যাট্রিক কেনেডি ও অধ্যাপক জেনিফার ক্রসের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরে ২৫ জানুয়ারি থেকে তারেক রহমানের বাসায় তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ম্যাডাম খালেদা জিয়া দেশে ফিরছেনএসংক্রান্ত সব প্রস্তুতিকাজ আমরা করছি। এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থায় সব কিছু জানানো হয়েছে। লন্ডন থেকে দেশে ফেরার বিষয়টি জানিয়ে গত সপ্তাহে বিএনপি মহাসচিব অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দেন।

দলীয় সূত্র আরো জানায়, ডা. জুবাইদা রহমান দেশে ফেরার পর তাঁর জন্য পুলিশের নিরাপত্তা চেয়ে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। সূত্র জানায়, দেশে ফেরার পর তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, জুবাইদা রহমান তাঁর ধানমণ্ডির বাসায় থাকবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post

Smartwatchs